যন্ত্রের জঠরে অদৃশ্য দেশ: পরাধীন ফিলিস্তিন ও আক্রান্তের স্মৃতি

-আবার যে কখনও হাইফাকে দেখব, তা আমি ভাবতেও পারিনি।

-তুমি হাইফাকে দেখছ না। তোমাকে ওটা দেখানো হচ্ছে।

হাইফায় ফেরা, ঘসসান কানাফানি, পৃ. ১৫১

Why did you bring me back here when I can’t feel this place? I can’t even see it, they are showing it to me.

You father was born 100 years old and so was the Nakba, রাজান আলসালাহ


ফিলিস্তিনি সাহিত্যিক ঘসসান কানাফানি-র নভেলা হাইফায় ফেরা (عائد إلى حيفا) ছেপে বেরোয় ১৯৬৯ সালে1। ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ এবং ইজরায়েলি সেনার দ্বারা উৎখাত হওয়া অজস্র ফিলিস্তিনির মধ্যে এক দম্পতি– সইদ ও সইফয়া, এই দুজন কুড়ি বছর পর তাদের বাসস্থান হাইফা শহরে ফিরে আসে, তাদের এই ফিরে আসার বৃত্তান্ত এই নভেলার উপজীব্য। দুই দশক আগে বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর সময় তাদের তৃতীয় সন্তান, পাঁচ বছরের খালদুনকে তারা পিছনে ফেলে এসেছিল, আসতে বাধ্য হয়েছিল। নিজেদের পুরোনো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে তারা বদলে যাওয়ার নিশানগুলো দেখে। পোল্যান্ড থেকে আসা এক ইহুদি পরিবারের হাতে চলে গেছে বাড়ির মালিকানা; বাড়ির ফলকে বদলে যাওয়া মালিকের নাম থেকে শুরু করে নতুন কলিং বেল, আসবাব, ফুলদানি এসবের সাথে সহাবস্থান করছে তাদের চেনা পুরোনো সিরিয়ান গালিচা, দেয়ালে বাঁধানো জেরুসালেমের ফোটো। সইদের মনে হয়, সেই বাড়ি এককালে তাদের হলেও, আজ কুড়ি বছর বাদে সে তার পুরোনো বাসিন্দাদের চিনতে পারছে না, তাদেরকে ‘অ্যাকনলেজ’ করছে না–ঠিক যেমন আজন্ম-চেনা শহর হাইফাও তাদেরকে আপন করে নিচ্ছে না। কিন্তু আরো বীভৎস মজা অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য। অচিরেই তারা আবিষ্কার করে, তাদের হারিয়ে যাওয়া ছেলে খালদুন এখনও জীবিত, এই বাড়িতেই তাকে অপত্যস্নেহে বড় করে তুলেছে ইহুদী দম্পতি। সে এখন ইজরায়েলি বাহিনীর যোদ্ধা, কদিন পরেই অস্ত্র হাতে লড়তে নামবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে। সইদ এবং সইফিয়ার কুড়ি বছর আগের স্মৃতি হাইফায় ফেরা ইস্তক ঘা খেয়ে খেয়ে বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন, দূরের স্বপ্নের মত অলীক হয়ে যায়। আখ্যানের উপান্তে এসে সেই বিচ্ছিন্নতা পৌঁছয় চরমে। আজন্ম যে সর-জমিনের সঙ্গে আত্মীয়তা বোধ করে এসেছে, এমনকি যে রক্তের টান তাদের অন্তরাত্মাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে—বছর কুড়ি বাদে ফিরে আসার পর এক অচেনা বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে মনে হয় যেন সবই মিথ্যে। সইদ সফিয়াকে জিজ্ঞাসা করে, ‘স্বদেশ কাকে বলে?’ স্বদেশ মানে কি তাদের ফেলে যাওয়া জিনিসগুলি, যেগুলো কুড়ি বছর পরেও বাড়ির মালিকরা বাতিল জিনিসের মত বের করে দেয়নি? স্বদেশ মানে কি তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানের স্মৃতি, তাকে ঘিরে জন্ম নেওয়া আশা, দুরাশা, খোয়াব? সইদ নিজেই তার জবাব দেয়, “স্বদেশ হল সেই দেশ, যেখানে এসব কিছুই ঘটার কথা ছিল না।” (১৮৬) ‘এসব’—অর্থাৎ বাস্তুহারা হওয়া, দেশচ্যুত হওয়া, নিজের সন্তানকে ‘অপর’ হয়ে যেতে দেখা। 

কানাফানির উপন্যাস প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় পাঠকের উদ্দেশে: ফিরে যাওয়া, প্রত্যাবর্তন, স্মৃতি– এসবের সার্থকতা কী? আদপেই কি স্মৃতির স্বদেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব? ঋত্বিক ঘটকের কোমল গান্ধার (১৯৬১) ছবির নায়ক ভৃগু যখন বলে, দুই বাংলার সংযোজক রেললাইনটি ‘কেমন যেন’ যোগচিহ্ন থেকে বিয়োগচিহ্ন হয়ে গেছে (পার্টিশনের পর), তখন তাতে প্রত্যাবর্তন ও স্মৃতি— দুইয়েরই সংকট ধরা পড়ে। জাতিরাষ্ট্রের সীমানা টপকে অবলীলায় পূর্ববঙ্গে ফিরে যাওয়া যদিও বা সম্ভব হয়, মনের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে যে অতীতের স্বদেশ– কালের ভাঙা সেতু ডিঙিয়ে সেখানেও কি ফিরে যাওয়া যায়? ঠিক এখানেই বাস্তুচ্যুত মানুষের অস্তিত্বের বিড়ম্বনা তীব্র হয়ে ওঠে। তার স্মৃতিতে অতীত হল সব পেয়েছির দেশ, আর সেই অতীতের ন্যারেটিভ শেষ হয় এক হৃদয়বিদারক বিলয়বিন্দুতে, যখন সে দেশচ্যুত হয়েছিল। এই কল্পিত স্মৃতির মোড়কে সে তার বর্তমানের সকল না পাওয়ার, না হওয়ার শূন্যতাকে ঢেকে রেখেছে। সেখানে ফিরে যাওয়ার একবগ্গা ইচ্ছে বর্তমানের আস্তাকুঁড়ের ওপর এক মায়াবি আবরণ টেনে দেয়—ভাঙা মানবসত্তাকে জোড়া লাগানোর আশ্বাস জোগায়।

কিন্তু ধরা যাক, সে-দেশে ফিরে যাওয়া গেল। এতদিন সময়ের পলি পড়ে পড়ে তার কিছু দিক মনের মধ্যে আবছা হয়ে গিয়েছে, কিছু আবার ভীষণ স্পষ্ট। ফিরে আসার পর দেখা গেল, দেশটা আর আগের মত নেই, তার চেনাপরিচিত চিহ্নগুলো আরো অচেনা সংযোজনের ভিড়ে বিসদৃশ ঠেকছে। নতুন ক্ষমতাশালী শ্রেণির পছন্দসই নকশায় বদলে গেছে তার ঘরবাড়ির আদল, রাস্তাঘাটের নাম। যেন একটা দেশ আরেকটা দেশের ওপর নিজেকে ঠেসে দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছে। স্মৃতিমেদুর কল্পনায় অতীতের স্বদেশ তার এককালের বাসিন্দাকে বুকে টেনে নিত, যেন তার জন্যই সে সাজিয়ে বসে ছিল নিজেকে। অথচ বাস্তবের তালগোলপাকানো স্বদেশকে স্বদেশ বলতে দ্বিধা হয়, অক্ষাংশ-দ্রাঘিমার নিরিখে তার অবস্থান একই থাকলেও সে ভিনদেশ। প্রত্যাবর্তন শব্দের মধ্যে রয়েছে আবর্তিত হয়ে পুরোনো বিন্দুতে ফিরে যাওয়ার দ্যোতনা, কিন্তু কানাফানির লেখা অনুযায়ী সেই বিন্দুটি প্রত্যাবর্তনকারী-র কাছে অধরাই থেকে যায়, অথবা সেখানে পৌঁছে যাওবার পর টের পায়, নিজের দেশে সে অনুপ্রবেশ করেছে আগন্তুক হিসাবে। চেনা জায়গা থেকে তার বিযুক্তি ঘটে গেছে, যোগ চিহ্ন বদলে গেছে বিয়োগ চিহ্নে, অতীত আর বর্তমানের মধ্যে এসে গিয়েছে এক অনপনেয় ছেদ। কানাফানির গল্পে হাইফা ছেড়ে দ্বিতীয়বার চলে আসার আগে সইদ তার স্ত্রীকে বলে– তাদের মত যে-সব মানুষ ফিলিস্তিন ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে, তাদের কাছে স্বদেশের খোঁজ হল ‘স্মৃতির ধুলোবালির নিচে চাপা পড়া একটা কিছুর সন্ধান।’ (১৬৭) তার পরেই সে স্বীকার করে– সেই অনুসন্ধানের ফলে উঠে আসে আরো ধুলো, আরো মালিন্য।

এই কথাগুলো যখন লিখছি, ঠিক সেই মুহূর্তে ইজরায়েল-অধিকৃত ফিলিস্তিনের গাজা স্ট্রিপ থেকে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। দীর্ঘদিন জবরদখল করে রাখার পর ইজরায়েল স্থির করেছে যে গাজা, নাকবার পরে যা ছিল ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের বিপুল সংখ্যক আরব অধিবাসীর মাথা গোঁজার ঠাঁই, সেখানে তাদের আর কোনো চিহ্ন রাখতে দেওয়া যাবে না; অতএব জাতিসংঘের রক্তচক্ষু, আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, দেশের ভিতরে ও বাইরে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন–এ-সব কিছু অগ্রাহ্য করে বেপরোয়া বোমাবর্ষণ আর ড্রোন অ্যাটাকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইজরায়েলি সরকার। সাতই অক্টোবরের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধি হামাস একের পর এক শান্তিচুক্তির প্রস্তাব নিয়ে গেছে ইজরায়েলের কাছে, কিন্তু সাম্রাজ্যবিস্তারের লক্ষ্যে অটল সে দেশের শাসক তাতে কান দেওয়া দরকার মনে করেনি। গেরিলাদের নিশ্চিহ্ন করার নামে নির্বিচারে বোম্ মেরে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঘন বসতিপূর্ণ শহর, পথঘাট, হাসপাতাল, ইস্কুল, ইউনিভার্সিটি। শান্তিপূর্ণ মীমাংসা আর কোনো পথ নয় তার কাছে, কোনোদিন ছিল বলে মনেও হয় না2। সোশাল মিডিয়ায় ফিলিস্তিনে সক্রিয় সংবাদদাতাদের প্রোফাইল থেকে ভেসে আসা রক্তে ছোবানো ছবি দেখে আর কোনো সন্দেহ থাকে না– গাজা-সহ স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়াই ইজরায়েল নামক ঘোরতর ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের ‘ফাইনাল সলিউশন’।

ফিলিস্তিনিদের কাছে এটা কোনো সাম্প্রতিক ঘটনা নয়– ১৯৪৮ থেকে হয়ে আসা মুহূর্মুহূ সামরিক আক্রমণের চূড়ান্ত দানবিক পর্যায় বলা যায় একে। ইজরায়েলি হর্তাকর্তারাই সেটা তৎপর হয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। গত বছর অক্টোবর মাসে আরিয়েল কালনার (ইজরায়েলি সাংসদ এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু-র লিকুদ পার্টির সদস্য) টুইট করে বলেছিলেন: ‘Right now, one goal: Nakba! A Nakba that will overshadow the Nakba of 48. Nakba in Gaza and Nakba to anyone who dares to join!’3 পাঠক হয়তো বুঝে গেছেন, ১৯৪৮ সালে ইংরেজদের থেকে জায়নবাদীদের হাতে ক্ষমতার হাতবদল হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার কালান্তক বিপর্যয়কে স্মরণ করা হয় আল নাকবা নামে। কালনারের মত আজকের যুদ্ধবাজ জায়নবাদীরা গাজার ওপর সেই একই বিপর্যয়কে দ্বিগুণ নৃশংসতায় ফিরিয়ে আনার ডাক দিচ্ছেন, এবং গত ছ’মাসের খবরে স্পষ্ট, সে-কাজে তাঁরা নির্মমভাবে সফল। গাজার পূর্বপ্রান্ত থেকে বোমাবর্ষণ শুরু করে ফিলিস্তিনিদের ক্রমশ ঠেলে দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমে রাফাহ-এ, এবার সেই শেষ আশ্রয়টি-কেও গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এরকম পরিস্থিতিতে যা হয়, আক্রান্ত মানুষের মনুষ্যত্ব এবং তার যাবতীয় লক্ষণগুলিকে অস্বীকার করা হয় ক্ষমতাশালী আক্রমণকারী রাষ্ট্রের তরফে। অর্থাৎ মানুষের পক্ষে যা যা কাম্য, যেসব জিনিস মানুষ হিসেবে তাকে পরিপূর্ণতা দেয়, তার সবই রাতারাতি কেড়ে নিয়ে তাকে সবার সামনে জঞ্জাল, উচ্ছিষ্ট বা নিদেনপক্ষে বর্বর জানোয়ার হিসেবে তুলে ধরা হয়– তা না হলে তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার যে আর কোনো অজুহাত থাকে না। ক্ষমতাশালীর চোখে আক্রান্তের জমি, বাসা, ভাষা, পরিবার, ইজ্জত, বাঁচার অধিকার–এসবই অপ্রয়োজনীয়, বাড়তি; সে সেগুলোকে নিজের মত কেটেছেঁটে নেয়। শুধু নিজের স্মৃতির ওপর অধিকারটুকু ছাড়া আক্রান্তের হাতে আর কিছুই পড়ে থাকে না, সেই স্মৃতিকেই সে নিজের মনে লালন করে, চারিয়ে দেয় নিজের সন্তানের মনে। প্রজন্মান্তরে, ভাষান্তরে, অনুবাদে, ভিন্ন ভিন্ন আখ্যানে পরম মমতায় আগলে রাখা হয় সেই স্মৃতি, তার সাথে মিশে থাকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন, স্বাধীনতার দাবি।

এবার যে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানে ফেরা যাক: স্মৃতিতে যে দেশের ঠিকানা রয়েছে, সেখানে বর্তমানে বা ভবিষ্যতে পৌঁঁছান যেতে পারে কি না সেই সংশয় মানুষের, বিশেষ করে বাস্তুচ্যুত মানুষের অস্তিত্বের অন্তর্লীন সংকট। নাকবার দুই দশকের মাথায় ঘসসান কানাফানির লেখায় সে সংকট ধরা পড়েছিল। তবে আজ তা অন্য চেহারা নিতে বাধ্য। কারণ ফেরা মানে এখন কেবল জলজ্যান্ত হাইফা শহরে সশরীরে প্রত্যাবর্তন করা নয়, স্মৃতি মানেও শুধু বহুকাল আগের অভিজ্ঞতার বিবরণ নয়– প্রত্যাবর্তন ও স্মৃতি– এ দুই-ই ডিজিটাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নতুন চেহারা নিয়েছে। আমাদের যাপনকে মুড়ে রেখেছে যে মিডিয়া, যে যন্ত্রের পেটের মধ্যে আমরা সেঁধিয়ে গেছি, তা পৃথিবীর সঙ্গে সত্তা ও স্মৃতির নতুন সংযোগস্থাপন করে, বা বলা ভালো, তাদেরকে গড়েপিটে নেয়। গুগল স্ট্রিটভিউয়ের মত প্ল্যাটফর্ম কি যে-কোনো পরিসরে ‘ইমার্সড’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় না? একআঙুলের চাপে আমরা সটান কোনো রাস্তায় সেঁধিয়ে গিয়ে আগুপিছু করে তার চারপাশ ঘেঁটে দেখতে পারি–দাবিটা এমন যেন চলন্ত গাড়িতে বসা যাত্রীর হাতে দূরবিন থাকলে সে এভাবেই তার চারপাশের দুনিয়াকে প্রত্যক্ষ করবে। নাকবার পর ফিলিস্তিন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া অগণিত মানুষের মধ্যে যাঁরা আজও জীবিত, বা তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম–তাঁদের কাছে সেই স্মৃতির ফিলিস্তিনের আজকের হালহকিকত স্বচক্ষে দেখা আরো সহজ হয়ে গিয়েছে স্ট্রিটভিউয়ের দৌলতে। ফিলিস্তিনি শিল্পীরা কিন্তু প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে স্মৃতি ও ফেরা-র প্রশ্নটির পুনর্বিবেচনা করা থেকে বিরত থাকেননি। স্ট্রিটভিউ-কে ব্যবহার করে স্মৃতিকে ঝালিয়ে নেওয়ার একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে রাজান আলসালাহ-র ছবিতে, যার নাম ইওর ফাদার ওয়াজ্ বর্ন হান্ড্রেড ইয়ার্স ওল্ড অ্যান্ড সো ওয়াজ‌্ দা নাকবা (২০১৭)4। 

রাজান আলসালাহ

রাজান আলসালাহ ফিলিস্তিনি ও লেবানিজ্ বংশোদ্ভুত পরিচালক5। তাঁর বাবা আর ঠাকুমা নাকবা-র সময় দেশান্তরি হতে বাধ্য হন। আলসালাহ-র জন্ম ১৯৮৭ সালে আবু ধাবি-তে, সেখানে তাঁর বাবা এরোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। অচিরেই চাকরি হারিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে আসতে হয় আরেক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লেবাননে। রাজান আলসালাহ তথ্যচিত্র বানিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন, তারপর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদান। অল্পদিন পরে বিজ্ঞাপন দুনিয়ার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায়, এমএফএ পড়তে। ভিনদেশে পাড়ি দেওয়ার দরুণ যে বিচ্ছিন্নতা ও দেশের প্রতি টান তাঁকে পেয়ে বসেছিল, তাই একের পর এক ভিডিও-তে ফুটে ওঠে। দেশের ছবি তাঁর কাজে ধরা দেয় মূলত স্ট্রিটভিউয়ের মারফত। ডিজিটাল দুনিয়া যে অশরীরী পরিভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দেয়, তার সাথে সশরীরে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষার টানাপোড়েনে স্ট্রিটভিউয়ের সাজানো-গোছানো পরিসর ক্রমশ ভাঙচুর হতে থাকে, তাতে ঢুকে পড়ে অন্য স্মৃতি, চাপা পড়া অতীত, বিজাতীয় শব্দ ও ছবি। আলসালাহ-র নিজের ভাষায়: “The process thus happens through understanding how these images were made and then seeing who is missing in this image, what is missing, what has been disappeared from this image, what is on the outskirts of this image, what is this image hiding, what is in-between.”6 অর্থাৎ ছবির হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে খুঁটিয়ে দেখে, তাতে উহ্য এবং প্রান্তিক থেকে যাওয়া মানুষ জীবন ও ইতিহাসের খানাতল্লাশি করতে করতেই আলসালাহ-র কাজ এগোয়। ভিমিও অ্যাকাউন্টে ইওর ফাদার… ছবির বর্ণনা দিতে গিয়ে, আলসালাহ লিখেছেন: ‘Oum Ameen, a Palestinian grandmother, returns to her hometown Haifa through Google Maps Streetview, today, the only way she can see Palestine.’ একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ওইম আমিন প্রকৃতপক্ষে তাঁর নিজেরই ঠাকুমার নাম,“Oum Ameen is my silent teta, my grandmother”  যিনি প্রবাসে কাটানোর সময়ে মৃত্যুর আগে অবধি একটি বারের জন্যেও মুখ ফুটে নাকবার কথা, ফেলে আসা দেশের কথা উচ্চারণ করেননি। আলসালাহ মনে করেন, তাঁর সমস্ত কাজের কার্যকারণসূত্র খুঁজতে হবে এই জাঁকিয়ে বসা নীরবতার মধ্যে। একদিকে যেমন দৈনন্দিন বাস্তব ফিলিস্তিনিদের ওপর ঘটে চলা অবিচারকে খুঁচিয়ে মনে করাতে ছাড়ে না, অন্যদিকে আত্মগ্লানি, সংকোচ ও অপমানবোধে কুঁকড়ে থাকা এক প্রজন্মের নীরবতা সেই বাস্তবকে আরো অসহ্য বৈপরীত্যে ভরিয়ে তোলে। আলসালাহ-র ধারণা, এই নীরবতার নেপথ্যে আছে ফিলিস্তিনি বাস্তুহারাদের গভীর অনুতাপ ও লজ্জাবোধ। জায়নবাদীদের চোখরাঙানি সত্ত্বেও দেশান্তরি হওয়া তাদের সামনে একমাত্র রাস্তা ছিল না– এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে থাকার জন্য তিনি কখনও গ্লানিমুক্ত হতে পারেননি। এই গ্লানিও আদতে ফিলিস্তিনিদের স্বাভিমানকে গুঁড়িয়ে দেওয়ারই কৌশল। নাকবা-র পরে ইজরায়েলের প্রচার করা অজস্র মিথ্যের মধ্যে একটা হল– ফিলিস্তিনি আরবদের-কে কেউ যেচে দেশ ছাড়তে বলেননি, তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তেই দেশ ছেড়েছেন। অর্থাৎ রীতিমত সন্ত্রাসবাদী অত্যাচার চালিয়ে প্রায় অর্ধেক ফিলিস্তিনিকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করার জ্বলজ্যান্ত সত্যিটা ধামাচাপা পড়ে গেল আরেকটা নির্লজ্জ মিথ্যের তলায়! আলসালাহ যথার্থই মন্তব্য করেছেন, যে এটা আসলে কলোনিয়াল শাসকের আরেক কৌশল, জবরদখলের অর্থনৈতিক আর সামরিক হিংস্রতার ওপর নরম গালচে বিছিয়ে দিয়ে, বাস্তুচ্যুত হওয়ার দায় বাস্তুহারার ওপর চাপানো: “Somehow the brunt of colonial violence is placed on people and the colonial narrative of ‘Yeah they left!’, ‘Yeah we bought a lot of property!’–whether the economic violence or military violence–is kind of dumped on the people. And it was internalised.” এই ছবিতে সেই কুন্ঠাজর্জর নীরবতাকেই তিনি ভাঙতে চেয়েছেন নতুন বয়ানে। তিনি নিজেই ঠাকুমার নাম নিয়ে গোটা ছবি জুড়ে ভয়েসওভার দেন, তাঁর দেশে ফেরার অভিজ্ঞতাকে বর্ণনা করেন। যে দেশকে, যে সময়কে তিনি স্বচক্ষে দেখেননি, তার স্মৃতিকে বিভিন্ন আখ্যান থেকে আত্মস্থ করে তাকে আজকের ইমেজদুনিয়ার সাপেক্ষে নতুন করে পর্যালোচনা করছেন, আবার একইসঙ্গে কল্পনা করছেন নাকবার প্রত্যক্ষদর্শী পূর্বপ্রজন্মের সঙ্গে তাঁর একাত্মতা। 

আলসালাহ-র ছবি শুরু হয় গুগল ম্যাপের ইমেজ দিয়ে। সেখানে হাইফার ওপর লোকেশন স্থির–সেখান থেকে সটান ঝাঁপ মারে স্ট্রিটভিউ লেভেলে। ভয়েসওভারে শোনা যায় একজন মহিলার কন্ঠ, ছবির বর্ণনায় যাঁকে ঠাকুমা ওউম আমিন বলে চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি আরেকজন আমিনের খোঁজে চলেছেন, অথচ আমিনকে উদ্দেশ্য করেই যেন সব কথা বলা। হাইফার সড়ক বেয়ে তিনি এগিয়ে যান, চারপাশের বাড়িঘরের দিকে চেয়ে দেখেন, তাদের ব্যালকনি, জানলার ওপর জুম ইন করে দেখেন সেখানে আমিন-কে দেখা যায় কি না, কিন্তু না। কোনো মহিলাকে হয়তো একনজরে চেনা মনে হয়, কিন্তু তার মুখ স্পষ্ট বোঝা যায় না। রাস্তায় দাঁড়ানো লোকদের উদ্দেশ্য করে কথা বলা এবং তাদের প্রত্যুত্তর না দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যায় এই তথাকথিত ইমার্শনের অন্তঃসারশূন্যতা। একদম শুরু থেকেই বোঝা যায়, যে ইজরায়েলের দখলে থাকা হাইফার রাস্তাঘাট ফিলিস্তিনের সমস্ত উপসর্গ ঝেড়ে ফেলেছে, বদলে গেছে পথের ধারে ঝোলানো দোকানের নামধাম। স্ট্রিটভিউয়ের অসীম বদান্যতায় পায়ের তলার কংক্রিটের ওপর ভেসে আছে ইংরেজি অক্ষরে রাস্তার নাম–Shivat Tsiyon street, যার প্রথম দুটো শব্দের অর্থ ‘জায়নে প্রত্যাবর্তন’। শিভাত জিয়ন ইহুদী জাতির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সন্ধিক্ষণ–কথিত আছে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ব্যাবিলন থেকে পারস্য-অভিমুখে যাত্রা করে ইহুদীরা জেরুজালেমে পৌঁছায়, তারপর সেখানে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে–তারই নাম শিভাত জিয়ন। আজকের ফিলিস্তিনের সঙ্গে সেই প্রাচীন ঘটনার নাম জুড়ে দেওয়ার মধ্যে যে পোয়েটিক জাস্টিসের দাবি রয়েছে, সেটাই দেশচ্যুত ফিলিস্তিনি মহিলার চোখে দগদগে শ্লেষ হয়ে ধরা দেয়। স্বদেশ থেকে বিচ্যুতির ওপর নতুন স্তর যোগ হয়–এক, যন্ত্র তার কথা মত সম্পূর্ণ ইমার্শন ঘটাতে ব্যর্থ হয়, স্ট্রিটভিউ-এর ইন্টারফেসে ওউম আমিনের উপস্থিতি সত্ত্বেও শহরের ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষ তার প্রতি নির্বিকার, তারা তার কথার প্রত্যুত্তরও দেয় না। স্ট্যাচু হয়ে যাওয়া মানুষ আর ভ্রাম্যমান অদৃশ্য দর্শকের অস্তিত্বের মধ্যে একটা গুণগত ফারাক প্রকট হয়ে ওঠে। দুই, বদলে যাওয়া শহরের পথঘাট এই পুরোনো বাসিন্দাকে কাছে টেনে নেওয়ার বদলে সরিয়ে দেয় দূরে। আমরা শহুরে আধুনিকতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রায়শই বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্নতা বা এলিয়েনেশনের কথা বলি। ডিজিটাল এসে কীভাবে তার ওপর কাল্পনিক পরত চাপিয়ে তাকে আড়াল করছে, আবার তলে তলে বিচ্ছিন্নতার বোধকেই বাড়িয়েই চলেছে–সে কথাও বলি। কিন্তু ভুলে যাই এই বোধের মাত্রা দেশকালভেদে ভিন্ন। 

আলসালাহ-র ছবিতে এটা অন্তত স্পষ্ট যে ডিজিটাল ইন্টারফেস উদ্বাস্তু মানুষের সঙ্গে ফেলে আসা দেশের কোনো কাল্পনিক একাত্মতা জোগায় না, বরং উদ্বাস্তুর স্মৃতিতে নিবিড় হয়ে থাকা স্বদেশকে বিপন্ন করে নতুন করে। স্ট্রিটভিউয়ের ছবি আদতে অত্যাধুনিক ফোটোগ্রাফিক প্রযুক্তির ফল– অর্থাৎ তাতে যা দেখা যাচ্ছে, তা ছবি তোলার সময়ে ক্যামেরার সামনে থাকার সম্ভাবনাই বেশি, তার সাথে স্ট্রিটভিউয়ের ত্রিমাত্রিকতা যোগ হয়ে বাস্তবতার দাবি আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এই তীব্র হয়ে ওঠা বর্তমানের বাস্তব, যা আগাগোড়া আনক্যানি, তা স্মৃতির স্বদেশের চিরতরে মুছে যাওয়ার সত্যকে আরো মর্মান্তিক, অসহনীয়, এবং একই সঙ্গে অনস্বীকার্য করে তোলে। স্মৃতিকে জিইয়ে রাখে যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন, চেনা পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন, তাদেরকে আরো অসম্ভাব্যতার দিকে নিয়ে যায়।

এর পাশাপাশি আলসালাহ সেই স্ট্রিটভিউয়ের ছবির ওপর যে কারিকুরি করছেন সেগুলোও খতিয়ে দেখা দরকার। ভয়েসওভারে যে মহিলার কন্ঠ শোনা যায়, যিনি কিনা একজন ফিলিস্তিনি ঠাকুমা–তাঁর কন্ঠে বার্ধক্যের লেশমাত্র ছোঁয়া নেই (আগেই বলেছি, আলসালাহ নিজে কন্ঠ দিয়েছেন), বরং তা কোনো তরুণীর শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে এমন মনে আসাটাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ এই ফিরে যাওয়ায় শরীর আর কন্ঠের মধ্যেও বিযুক্তি ঘটে গেছে। আজকের মিডিয়া, আজকের ছবি, আজকের পৃথিবীতে ঢুকে প্রৌঢ়া ওউম আমিনের কন্ঠ মনে করাচ্ছে ১৯৪৮ সাল, বা তারও আগের এক তরুণীর শরীরকে, কিন্তু সে পুরোমাত্রায় উপস্থিত এই বর্তমানে7। দ্বিতীয়ত, হাইফার সড়ক বেয়ে চলার সময় বা বন্দরের কাছে এসে যখন ওউম আমিনের পুরানো স্মৃতি ফিরে আসে, তখন স্ট্রিটভিউ-এর ইমেজের ওপর ভেসে ওঠে সে-সব লোকেশনের গত শতাব্দীর প্রাচীন সাদা কালো ফোটোগ্রাফ। নিউ মিডিয়ার ওপর ক্ষণিকের জন্য লেপটে থাকা প্রাচীন মিডিয়ার অবশেষ, যা অতীতের লক্ষণা (মেটোনিমি) এবং রূপক (মেটাফর) – দুই-ই। তৃতীয়ত, ছবির শেষে এসে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমিনের চোখ (নাকি কার্সর?) ঝট করে নেমে আসে বন্দরের জেটিতে: দেখা যায় সেখানে কয়েকটি বাচ্চা ট্রাইসাইকেল চালাচ্ছে, যদিও তাদের কারোর মুখই স্পষ্ট বোঝা যায় না। একজনের ওপর জুম ইন হয়, ভয়েসওভার তাকে আমিন বলে শণাক্ত করে, তারপর চোখ সরে যায় একটু দূরে, পাশের বাচ্চাটির ওপর, এবার তার উদ্দেশ্যে ‘আমিন’ ডাক শোনা যায়। তারপর আবার একটু দূরে, আরেকটি বাচ্চার ওপর, সেও ট্রাইসাইকেল চালাচ্ছে, এবং তাকেও ওউম আমিন স্নেহভরা গলায় আমিন বলে ডাকে। অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিটি শিশুর মুখে যেন হারিয়ে যাওয়া আমিনের ছায়া রয়েছে। 

যে তিনটি দৃষ্টান্ত তুলে দিলাম, তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার– আলসালাহ কালের সরলরৈখিক প্রগতির বিকল্প একটি কালপ্রতিমা তুলে ধরতে চাইছেন, তা না হলে প্রৌঢ়ার শরীর থেকে তরুণীর কন্ঠ বেরোতে পারে না, স্ট্রিটভিউয়ের ওপর সেলুলয়েড ইমেজের প্রেত ফিরে আসতে পারে না, এমনকি প্রায় আট দশক আগে হাইফায় ফেলে আসা শিশুটিকে সন্ধান করতে এসে তাকে আজকের শিশুর মধ্যে আবিষ্কার করা–তাও অসম্ভব। এটা স্মৃতির বিপন্নতার উপসর্গ। স্মৃতি আর অতীতের ঘটনার নিরাপদ আধার থাকে না, স্ট্রিটভিউয়ের ইন্টারফেসের ভিতর দিয়ে দেখা বীভৎস আনক্যানি শহর স্মৃতির আবরণ কেটে অতীতের লক্ষণাগুলিকে বের করে আনে; বর্তমানকে অতিক্রম করে ভবিষ্যতে সঞ্জীবিত হওয়ার যে আশা স্মৃতিতে দ্যুতিময় হয়ে ছিল, তার সামনে দাঁড়ি টেনে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বপ্নের সামনে মিডিয়ার জঠরে থাকা এই বাস্তব হয়ে দাঁড়ায় প্রতিবন্ধকতা, প্রায় অনতিক্রম্য এক প্রাচীর।

প্রায় অনতিক্রম্য। ছবির শেষে, সূর্যাস্তের আলো-মাখা ভাঙাচোরা সমুদ্রের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে, দিগন্তে বিলীয়মান জাহাজের দিকে চেয়ে ধীরকন্ঠে ওউম আমিন বলেন, ‘আমায় ফিরতেই হবে। বেহেস্তে যাওয়ার আগে ফিরতেই হবে আমায়।’ শেষ বাক্যটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই একটা অন্ধকার আকাশ থেকে নেমে এসে ফ্রেমটাকে গিলে নেয়। স্ট্রিটভিউয়ের সীমান্তে পৌঁছানোর পর, সমুদ্র এবং আকাশ চিড়ে যন্ত্রের ফাটা খোল থেকে বেরিয়ে আসে অন্ধকার, পোশাকি ভাষায় যাকে গ্লিচ বলে। মিডিয়া-প্রসূত বাস্তবের পরপারে যে আঁধার, যাকে এখনও সিনেমা বা স্ট্রিটভিউ– কেউই দেখতে পায়নি, তার দ্যোতনা অসীম; একদিক থেকে দেখলে তা অনির্দেশ্যতার দ্যোতক। আলসালাহ সে অর্থে একজন বিষণ্ণ তবু বাস্তববোধসম্পন্ন পরিচালক: তিনি যন্ত্রের জঠরে থাকা ফিলিস্তিনের কোনো উত্তরণ স্বপ্ন দেখাননি, কিন্তু তার কফিনে পেরেক পড়ে গেছে–এমন নৈরাশ্যজনক সিদ্ধান্তেও পৌঁছাননি। যন্ত্র চাক্ষুষ করাচ্ছে কীভাবে ফিলিস্তিনকে ঢেলে সাজিয়েছে ইজরায়েল, যেন ১৯৪৮-এর আগে তার কোনো অতীত ছিল না! এক যৌথ ষড়যন্ত্রে ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নের সামনে তুলে দেওয়া হয়েছে আকাশজোড়া পাঁচিল8। কিন্তু সমুদ্রের সীমান্তে এসে এই বাস্তবও চিড় খায়। সেই চিড় খাওয়া বাস্তবের সামনে নেমে আসা আঁধার ওউম আমিনের দৃষ্টির শুশ্রূষা করবে, তার স্মৃতিকে লালন করার অবকাশ দেবে নতুন শক্তিসঞ্চয় করে আবার ফিরে আসার আগে। 

এই ছবিটি নিয়ে বলতে গিয়ে আলসালাহ মন্তব্য করেন, ‘What return looks like as a structure is unknown’, ফেরার ধরণটা ঠিক কী, তা আজও অজানা। কিন্তু তিনি এও জানান, যে নেশন-স্টেট নামক কাঠামোটিতে তাঁর কোনো আস্থা নেই, এবং ফিলিস্তিন নিয়ে কোনো জাতিরাষ্ট্র-নির্ভর রোম্যান্টিকতায় মজে থাকাও তাঁর কাছে অসহ্য, কারণ জাতিরাষ্ট্রের কাঠামো অনেকটা ক্লাব আর কাল্ট-এর মত; তাতে ঢুকে পড়া মানেই নতুন বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া, আমরা-ওরা, আমার-তোমার— এসব জল-অচল খোপে আটকা পড়ে যাওয়া; তিনি স্পষ্ট বলে দেন, ‘Palestine is not a nation-state project’। গর্ব প্রকাশ করে বলেন, ফিলিস্তিন সেসব মানুষের জন্য, এককালে যাঁদের জাতিরাষ্ট্রের অধিকারকে অস্বীকার করা হয়েছে, এবং যারা স্বয়ং সেই ‘জাতিরাষ্ট্র’ নামক ক্লাব বা কাল্টটিকে প্রত্যাখ্যান করে ফেরা ও মিলেমিশে থাকা-র আনকোরা এক আঙ্গিকের জন্ম দেবে।  সুতরাং আজকাল দুনিয়া জুড়ে দক্ষিণপন্থীরা যে অতীতে ফিরে যাওয়ার ডাক দিচ্ছেন, তার সাথে ফিলিস্তিনি প্রত্যাবর্তনের দাবি ও তার স্মৃতির রাজনীতির আকাশ পাতাল তফাৎ। প্রথমটাতে উদ্দেশ্য হল জাতিরাষ্ট্রের ভিত আরো মজবুত করা, সোনালি অতীতের ধুয়ো তুলে তাকে ট্রাইবে পরিণত করা, যা আসলে যৌথ পরিবারেরই বৃহত্তর রূপ, কারণ সেখানে প্রত্যেক সদস্য এক বর্ণের, একই ধর্মের, একই ব্লাডলাইনের অংশ; অতএব সেখানে অতীতের নির্মাণও হয় খুব ছক কষে, রোম্যান্টিকতার আরকে মজিয়ে। অপরদিকে, আলসালাহ-র কাজে যে ফিলিস্তিনের সম্ভাবনা ও দাবি চাপাস্বরে নিজেদের জানান দেয়, তা শুধু একটি ভূখন্ডে স্বায়ত্তশাসন কায়েম করা নয়, বরং জাতিরাষ্ট্রের কাঠামোকে ভেস্তে দিয়ে, আমরা-ওরার বিভাজনকে অবিন্যস্ত করে এক নতুন ভবিষ্যত নির্মাণ করা। কানাফানির গল্পের নায়ক সইদের উক্তি একটু রদবদল করে নিয়ে বলতে হয়, স্বদেশ মানে তাই, যেখানে কেউ-ই অপর হয়ে যায় না। এখানে স্মৃতি ও অতীতের ভূমিকা ভিন্ন, বা বলা ভালো, এখনও অস্পষ্ট, তা একটি সতত পরিবর্তনশীল ও জটিল প্রক্রিয়ার সচেতন অংশ। অর্থাৎ ওউম আমিনের ফেরার যে পৌনঃপুনিকতার আভাস তাঁর শেষ সংলাপে রয়েছে, তার ব্যঞ্জনা শুধু বারবার ফেরায় সীমিত থাকে না। তার অর্থ নতুন করে নতুন পথে ফেরা9, যাতে অতীতের স্বদেশ ও ভবিষ্যতের স্বপ্নের ফারাক ও সাযুজ্যকে একটু একটু করে চিনে নেওয়া যায়। জাতিরাষ্ট্রের ক্রমশ স্থিতিশীলতার দিকে একমাত্রিক অভিযাত্রার যে আঙ্গিক, তার পরিবর্তে একটি অসমসত্ত্ব ও জটিল পুনরাবৃত্তিময় কালিক চেতনার আভাস দেওয়ার মাধ্যমেই আলসালাহ-র ছবি শেষমেশ হয়ে ওঠে জাতিবর্ণ নির্বিশেষে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে কন্টকবিদীর্ণ পথে যাত্রার রূপক।

স্মৃতি তো অতীতের আঁকাড়া স্মরণ নয়। স্মৃতি আসলে অতীতকে আখ্যানে পরিণত করার প্রক্রিয়া–তার সাথে জড়িয়ে আছে ভবিষ্যতে ন্যায়ধর্ম প্রতিষ্ঠার আশা। সংকটের মুখে নির্মম আশাবাদকে জিইয়ে রাখার অন্যতম উপাদান হল স্মৃতি। মিডিয়া প্রযুক্তি সেই স্মৃতিকে মানুষের মগজ থেকে বেরিয়ে ছবি, শব্দ, লেখা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকার সুবিধে করে দেয়। রাজান আলসালাহ-র কাজে গুগল স্ট্রিটভিউয়ের দুনিয়ায় সেই মিডিয়া-বিধৃত স্মৃতির বিপন্নতাই ফুটে ওঠে। এককালের চেনা দেশ কীভাবে ক্রমশ ডিজিটাল মিডিয়ায় হারিয়ে যায়, চেখের সামনে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখে স্মৃতি ও আশাভরসা সবই যে আহত হয়, তা সেখানে স্পষ্ট। ঠিক যেমন এই মুহূর্তে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে গাজায় ইজরায়েলি সৈন্যের নাশকতার ছবি, জায়নবাদী যোদ্ধা, জনতা ও নেতানেত্রীদের নারকীয় জয়োল্লাসের ক্লিপ, শক্তিশালী মিসাইল-হানার পর গাজার ধ্বংসস্তূপের ড্রোন ভিডিও। গাজায় বসবাস করা মানুষদের জীবন, সম্পত্তি, অধিকারের পাশাপাশি, গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছে ইজরায়েল বার্তা পাঠাচ্ছে যে ফিলিস্তিনের শেষ এখানেই; নেতানিয়াহু হুংকার ছেড়ে বলছে, “ইজরায়েল যা প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দেবে। আগামী কয়েক দিনে আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেব, তার স্মৃতি তাদের কয়েক প্রজন্ম ধরে তাড়া করবে।”10 অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের আগের ফিলিস্তিন নয়, বা অটোমান শাসনাধীন পরধর্মসহিষ্ণু, বিভিন্ন জাতির সহাবস্থানের ফিলিস্তিন নয়–  ইজরায়েলের এই ধ্বংসলীলার ছবিই হয়ে উঠবে আগামী প্রজন্মের কাছে ফিলিস্তিনের একমাত্র স্মারকচিহ্ন। 

কিন্তু সেই আস্ফালনের মুখে চুনকালি দিয়ে উল্টোদিক থেকে উঠে আসছে প্রতিস্পর্ধী কন্ঠ। আকাশ থেকে বোমা পড়ার ভয়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, সোশাল মিডিয়া বিশেষত ইন্স্টাগ্রামের অসংখ্য সংবাদদাতা ও ইউজার গাজা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং মিশর, জর্ডন প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশের শরণার্থী শিবির থেকে বানিয়ে চলেছেন একের পর এক ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে– চারপাশের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তাঁরা বাজারে যাচ্ছেন, বেশি দাম দিয়ে রুটি কিনছেন, ঈদের আয়োজন করছেন, পাড়াপড়শির সঙ্গে গান গাইছেন কোনো তাঁবুর ছাওয়ায় বসে। কিছু ভিডিও-তে দেখি, শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে ফাঁকা জমি পেয়ে সেখানে অনেকে মেতে উঠছেন বিভিন্ন খেলায় (বিশেষ করে parkour)। তাঁদের সহজ সরল দেহভঙ্গিমা, দেহকে অস্বাভাবিক উচ্চতায় ছুঁড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকার পর আবার নিরাপদে মাটিতে নেমে আসার সাবলীলতা— এসব যেন বর্তমানের একবগ্গা পুনরাবৃত্তিকে ছাপিয়ে গিয়ে, মৃত্যু আর কোনো মতে বেঁচে থাকার বাঁধা ছককে ভেঙে, এক অনন্য শরীরী অস্তিত্ব কল্পনা করতে বদ্ধপরিকর11

 বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগণিত সোশাল মিডিয়া ইউজারের কাছে উঠে আসছে অন্য ফিলিস্তিনের ছবি। অনবরত ধ্বংস আর মৃত্যুর প্রতিবেদন দেখে শুনে ক্লান্ত হতাশ হয়ে ওঠা প্রাণে তাঁরা পুঁতে দিচ্ছেন নতুন আশার বীজ। পৃথিবী জুড়ে ফিলিস্তিনের সপক্ষে এবং ইজরায়েল ও তার বন্ধুরাষ্ট্রদের বিরুদ্ধে যে জনমত গড়ে উঠেছে, তাকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন। সে-সব ভিডিও ঘিরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লাইক, কমেন্ট, উচ্ছ্বাস আর অভিনন্দনের যে ঢল নামে, যে সংহতির ভিত গড়ে ওঠে, তা আসলে রাজান আলসালাহ-র প্রত্যয়কেই আরো দৃঢ়তা দেয়: ফিলিস্তিন কোনো জাতিরাষ্ট্রের একক প্রকল্প নয়, তা একটি বিশ্বজনীন প্রকল্প– বিশ্বজোড়া নিপীড়িত বাস্তুচ্যুত মানুষ আর তাঁদের পাশে দাঁড়ানো জনগণের উপনিবেশ, সাম্রাজ্য ও পুঁজিবাদ-বিরোধী সংগ্রামের অপর নাম। তাঁদের স্মৃতি ও স্বপ্নের জোগান কোনোদিনই ফুরোবার নয়।


শিরোনামের ‘যন্ত্রের জঠর’ শব্দবন্ধটি রোববার পোর্টালে প্রকাশিত অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনগুপ্তের একটি সাম্প্রতিক নিবন্ধ থেকে নেওয়া। এখানে মানে প্রায় এক থাকলেও আমি একটি অন্য তাৎপর্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অধ্যাপক সেনগুপ্ত যন্ত্রের পেট বলতে এখনকার ডিজিটাল মিডিয়া আর তার ইন্টারফেস-কে বুঝিয়েছেন; হাতের মুঠোয় ধরা স্মার্টফোনের হরেকরকমবা-এ মজে থাকতে থাকতে ইউজারের সত্তা সাময়িকভাবে যে আপাত পরিপূর্ণতা-র আরাম পায় সেদিকটায় জোর দিয়েছেন। আমি দেখাতে চাইছি যে ইউজার-বিশেষে এর সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া সম্ভব, অর্থাৎ যন্ত্রের পেটে ঢুকে বিচ্ছিন্নতাবোধ সাময়িকভাবে লাঘব হওয়ার পরিবর্তে আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, “চার্লির মত আমরাও কিন্তু যন্ত্রের পেটেই আছি” রোববার ডিজিটাল, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪. https://robbar.in/daily-update/charlie-chaplins-modern-times-and-our-modern-times/


  1. হাইফায় ফেরা-র সব কটি উদ্ধৃতি ক্যারেন রাইলি-কৃত ইংরেজি ভাষান্তর অনুসারে তরজমা করেছি। Ghassān Kanafānī, “Returning to Haifa” in Palestine’s Children : Returning to Haifa and Other Stories, trans. Barbara Harlow and Karen E. Riley. (Boulder, CO: Lynne Rienner Publishers, 2000), 149-188.
    ↩︎
  2. অর্ক ভাদুড়ি, “ইজরায়েলের গাজা আক্রমণ যুদ্ধ নয়, সুপরিকল্পিত গণহত্যা”, নাগরিক.নেট, ২০ অক্টোবর ২০২৩.https://nagorik.net/politics/international-politics/israel-is-not-in-war-it-is-carrying-out-well-planned-genocide/
    Ilan Pappe, “Palestine: Endless Occupation, Permanent Crisis”, Marxist XXXIX, no. 3-4, (July-December 2023): 10-32. ↩︎
  3. “Israel MK calls for a second Nakba in Gaza”, Middle East Monitor, October 9, 2023
    https://www.middleeastmonitor.com/20231009-israel-mk-calls-for-a-second-nakba-in-gaza/. ↩︎
  4.  ছবিটি আমার নজরে আনার জন্য ধন্যবাদ বন্ধু খুশবু ভুটানি-কে। খুশবু পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি ছবি নিয়ে গবেষণা করছেন, এ-বিষয়ে সে আমার চেয়ে অনেক সুচিন্তিত অভিমত দিতে পারবে। সম্প্রতি রাজান আলসালাহ-র কাজে প্রত্যাবর্তনের ব্যঞ্জনা ও প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ফিল্ম-ফিলোসফি জর্নালে, আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। Samira Makki. “Even the Sea is Broken: Return and Loss in Razan AlSalah’s Video Works,” Film-Philosophy 28, no. 2 (June 2024):248-268.

    এখানে বলে রাখি, ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে স্ট্রিটভিউ ও স্মৃতির রাজনীতি নিয়ে কাজ করার চমৎকার উদাহরণ হল সুনীল সানজ্গিরি-র ছবি। তার নাম Letter From Your Far-Off Country (2021)।
    ↩︎
  5. https://razanalsalah.com/info ↩︎
  6.  Shahrzad Arshadi and Caroline Kunzle. ‘Conversation With Razan Al-Salah’. Future is Now (podcast), July 20, 2022 (accessed May 13, 2024)
    https://podcasters.spotify.com/pod/show/future-is-now-podcast/episodes/Conversation-With-Razan-Al-Salah-e1lffdl. ↩︎
  7. শব্দ সবসময়ই আংশিক বা খন্ডিত। উৎস থেকে নাড়ি ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্তিত্ব দাবি করা তার পক্ষে অসম্ভব। ঠুংঠাং শব্দ শুনলে আমরা তৎক্ষণাৎ ধরে নিই সেটা পেয়ালা পিরিচের ঠোকাঠুকির শব্দ। ঠুংঠাং, মচমচ, ধপাস, গুরুম্, টাপুরটুপুর –এদের কোনো নিজস্ব অস্তিত্ব নেই। একই ভাবে, কন্ঠস্বরও কখনও সম্পূর্ণ বিদেহী হয়ে উঠতে পারে না, কারণ তা শোনা মাত্র তার উৎস অর্থাৎ একটি জলজ্যান্ত শরীর নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে ওঠে। আমরা শুধু সেই ব্যক্তিবিশেষের বাগযন্ত্র নয়, তার বয়স, রূপ, অভিজ্ঞতা ইত্যাকার বিশেষত্ব মনে মনে কল্পনা না করে পারি না। স্টিভ কনর এর নাম দিয়েছেন ‘ভোকালিক বডি’ বা স্বরসৃষ্ট শরীর।  Steven Connor, ‘What I Say Goes’ in Dumbstruck: A Cultural History of Ventriloquism (Oxford, 2000), 3–44. https://doi.org/10.1093/acprof:oso/9780198184331.003.0001, accessed 13 May 2024. আরো দ্রষ্টব্য, Christian Metz, “Aural Objects.” trans. Georgia Gurrieri, Yale French Studies 60 (1980): 24–32. https://doi.org/10.2307/2930002. ↩︎
  8.  এখানে বলে রাখা দরকার, গুগল আর ইজরায়েলের যৌথ ষড়যন্ত্র বললে কিছুই বাড়িয়ে বলা হয় না। ইজরায়েলকে সার্ভেলেন্স প্রযুক্তি জোগানোর জন্য গুগল চালু করেছে প্রোজেক্ট নিম্বাস, তাতে বিপুল অনুদান জোগাচ্ছে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। এ-কাজে তার স্যাঙাত অ্যামাজন। প্রোজেক্ট নিম্বাসের অনেক অসাধু উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হল– ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরায় ফিলিস্তিনিদের আচরণ-অভিব্যক্তি বিচার করে তাদের ‘প্রকৃত অভিসন্ধি’ ঠাহর করা (সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস)। দুই টেক-প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই একদল কর্মী এই প্রোজেক্টের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তেইশে এপ্রিল অবধি যা খবর সে অনুযায়ী শান্তিভঙ্গের অপরাধে গুগল তার ৫০ জন আন্দোলনরত কর্মীকে ছাঁটাই করেছে
    Sam Biddle. “Documents Reveal Advanced AI Tools Google Is Selling to Israel”. The Intercept,  July 24, 2022 (accessed May 18, 2024). 
    ↩︎
  9. ফিলিস্তিনের প্রেক্ষিতে প্রত্যাবর্তনের রাজনীতি সম্বন্ধে আরো বিশদ আলোচনা-র জন্য দ্রষ্টব্য, Rayya El Zein, “To have many returns: Loss in the presence of others”, World Records, 4  (2020): 41–54. ↩︎
  10. অর্ক ভাদুড়ি, “ইজরায়েলের গাজা আক্রমণ যুদ্ধ নয়” ↩︎
  11. সঙ্গের স্ক্রিনশটগুলি Bisan Owda (wizard_bisan 1) আর amirgharabawi-র ইন্স্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে নেওয়া 
    https://www.instagram.com/wizard_bisan1/?hl=en
    https://www.instagram.com/amirgharabawi/. ↩︎

Leave a comment