আমরা কাউন্টার শট। বাংলা ভাষায় সিনেমা নিয়ে লেখালিখির একটি ওয়েব পোর্টাল। কিন্তু সিনেমা নিয়ে লেখালিখি কেন করব? ন্যায্য প্রশ্ন। শিল্প বা চারুকলার ব্যাপারে কলমবাজি করাটা তো ছায়ার সাথে লড়াই করার মতন – তাতে সর্বাঙ্গে ব্যথা বাড়ে বই কমে না – তা সত্ত্বেও কেন?
আমরা যারা নিয়মিত ছবি গান কবিতা উপন্যাস চলচ্চিত্র – এইসবের সান্নিধ্যে আসি তারা জানি শিল্পমাধ্যমের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত একটা টাগ অফ ওয়ার চলে। এই টাগ অফ ওয়ার মূর্তের সাথে বিমূর্তের। যা দেখছি, যা প্রত্যক্ষ – যা সটান আমায় স্পর্শ করছে – তার মূর্ত দিকটির সাথে সূক্ষ্মকোণে বিন্যস্ত এক ব্যঞ্জনার জগত আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। এই ডাকের প্রত্যুত্তরেই আমরা কেউ কেউ লেখালিখি করতে উৎসাহ পাই। অর্থাৎ সিনেমা নিয়ে লিখতে বসা মানে চৌখুপি ফ্রেমের মধ্যে যে দিগন্তজোড়া সম্ভাবনার দিকটা চোখে পড়ে, তার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া। সতত ওলোট পালট হতে থাকা দৃশ্য-ধ্বনির ওপর ভর করে, নিজেকে ভেঙেচুরে গড়তে গড়তে, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সাথে পায় পায় যা অগ্রসর হয়–ফ্রেমের সাথে আলগোছে আটকে থাকা ল্যান্ডমার্ক ফলো করে তার কাছে পৌঁছনোই লক্ষ্য। তবে সে যাত্রায় শেষমেশ ভরাডুবিই ভবিতব্য, কারণ চলচ্চিত্রের ছায়ায় মায়ায় রহস্যের যে খাসমহল গড়ে ওঠে তিলে তিলে, শব্দের জাদুকাঠি দিয়ে তার দরজা খোলে না। শব্দের যে ভাষা – তার ক্ষমতা সীমিত, সে তার আড়ষ্ট শরীর নিয়ে কদাচিৎ সেই ব্যঞ্জনার কাছে পৌঁছতে পারে। এতদসত্ত্বেও সিনেমা নিয়ে যাঁরা লেখালিখি করে এসেছেন, করছেন, এবং ভবিষ্যতেও করবেন – তাঁদের বরাবরের অভিপ্রায় হল ছবির সাথে আখরের এই কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া।
সিনেমা নিয়ে লেখালিখির গরজ আরেকভাবেও আসে। আমরা যারা সিনেমার দর্শক, যারা ছবি বানাই বা বানাই না, যাদের কাছে ছবি বানানোর পুঁজি আছে অথবা নেই – এবং আমরা যারা সিনেমার হালহকিকত নিয়ে মুষড়ে পড়ি মাঝে মাঝে, তার অধঃপতন দেখে হাহুতাশ করি – তাদের কাছে সিনেমা নিয়ে কলমবাজি করা অনেকটা ভিনগ্রহীদের উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠানোর মতনই। এখানে বার্তার লক্ষ্য কিন্তু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নয়; যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষমতা ও অর্থের জোরে সিনেমার গতিপ্রকৃতি স্থির করে দেয়, তারাও নয়; আমাদের লক্ষ্য বরং ভবিষ্যতের সিনেমা – নতুন সিনেমা – যা এখনও সিনেমার পর্দায় ফুটে ওঠেনি। বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে গেলে: ক্রমশ প্রকাশ্য। যেহেতু তা ভবিষ্যতের সেহেতু তার নেই কোনো বর্তমান অস্তিত্বও। ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন যেমন চিরাচরিত গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারকে খারিজ করে নতুন রেভলিউশনারি ক্যালেন্ডার চালু করা হয়েছিল- আমরাও স্বপ্ন দেখি সেরকম একটি নতুন সিনেমার – যা আমাদের বর্তমানের হতাশাময় সিনেমাযন্ত্রের গতে-বাঁধা পথ থেকে বিচ্যুত হবে, আর দর্শকদেরও করবে। সিনেমা নিয়ে লেখালিখি মানে সেই বিচ্যুতির বিন্দুটাকে আগে থেকে জরিপ করা, তাকে অক্ষাংশ দ্রাঘিমা সমেত চিনে নেওয়া, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠানো এবং অপেক্ষায় থাকা–কবে জবাব আসে সিনেমায়। শটের প্রত্যুত্তর– কাউন্টারশটে।
সম্পাদকীয় টিম
সৌম্যদীপ বসু
লাবণ্য দে
সায়ন্তন দত্ত
অভিষেক রায় বর্মণ